উইলিয়ামসেনর লড়াকু ইনিংসে ৯২ বছরের অপেক্ষা শেষ হলো

নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় টেস্টে অপ্রতিরোধ্য
উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের ৯২ বছরের অপেক্ষা ঘুচালো
টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩২তম সেঞ্চুরি তুলে নিলেন কেইন উইলিয়ামসন।

হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে যেন বোলারদের দাপটই দেখা গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ২৪২, ২৩৫ ও আর নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের ২১১—স্কোরকার্ডেই তা স্পষ্ট। তাছাড়া এই মাঠে ২০০ এর ওপরে রান তাড়া করে চতুর্থ ইনিংসে টেস্টে জয়ের কীর্তিও ছিল একবার এবং সেটা ২০০০ সালে। সেখানে আজ ২৪ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে দিল নিউজিল্যান্ড।

দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ২৬৭ রানের লক্ষ্যে গতকাল তৃতীয় দিনেই ব্যাটিংয়ে নামে নিউজিল্যান্ড। সেখানে ইনিংসের ১৪তম ওভারের পঞ্চম বলে কিউই ওপেনার ডেভন কনওয়েকে এলবিডব্লু করেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার ড্যান পিট। কিউইদের স্কোর হয়ে যায় ১৩.৫ ওভারে ১ উইকেটে ৪০ রান। তখনই দিনের খেলা ঘোষণা করে দেন আম্পায়ার। সেখান থেকে আজ চতুর্থ দিনের খেলা যখন নিউজিল্যান্ড শুরু করে, তখন বেশ সাবধানী ব্যাটিং করে। বিশেষ করে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা কেইন উইলিয়ামসন। উইকেটে আঁকড়ে ধরে সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।  ৭ উইকেটে জিতে কিউইরা ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করল। তাতে নিউজিল্যান্ডের ৯২ বছরের অপেক্ষাও ফুরোল। ১৯৩২ সাল থেকেই নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজ খেলছে।

একই সঙ্গে এটা হ্যামিল্টনে টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। এর আগে ২০০০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১০ রান তাড়া করে জয় লাভ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। যা এখন এই মাঠের হিসেবে রান তাড়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয়ে গেছে। 

হ্যামিল্টনে আজ চতুর্থ দিনের খেলা শুরুর কিছুক্ষণ পরই উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ২০তম ওভারের পঞ্চম বলে পিটকে কাভার এলাকা দিয়ে তুলে মারতে যান টম লাথাম। শর্ট কাভারে সহজ ক্যাচ ধরেন জুবাইর হামজা।  ৫৭ বলে ৫ চারে ৩০ রান করেন লাথাম।  কিউইদের স্কোর হয়ে যায় ১৯.৫ ওভারে ২ উইকেটে ৫৩ রান।

প্রথম দুই উইকেট পড়ার পর চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন রাচীন রবীন্দ্র। উইলিয়ামসনের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন রবীন্দ্র। টেস্টে যেভাবে ব্যাটিং করা দরকার, সেভাবেই ব্যাটিং করেন রবীন্দ্র ও উইলিয়ামসন। হাতে দুই দিনের মতো সময় থাকায় কোনোরকম তাড়াহুড়ো করেননি তাঁরা। তৃতীয় উইকেটে  ১৬০ বলে ৬৪ রানের জুটি গড়েন উইলিয়ামসন ও রবীন্দ্র। ৪৭ ওভারের তৃতীয় বলে রবীন্দ্রকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন পিট। রবীন্দ্র ৭২ বলে কোনো চার ছক্কা ছাড়াই করেন ২০ রান।

রবীন্দ্র ফিরলে নিউজিল্যান্ডের স্কোর হয়ে যায় ৪৬.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ১১৭ রান। এরপর পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন উইল ইয়ং। উইলিয়ামসন যেন এখান থেকেই নিউজিল্যান্ডকে জেতানোর প্রতিজ্ঞা করেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩২তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ২০৩ বলে। চতুর্থ উইকেটে উইল ইয়ংকে নিয়ে উইলিয়ামসন গড়েন  ২৮৮ বলে ১৫২ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি।  ৯৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সেফো মোরেকিকে  এক্সট্রা কাভার ও মিড অফের মাঝখান দিয়ে চার মারেন উইলিয়ামসন। তাতেই টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর কীর্তি গড়ে নিউজিল্যান্ড।  ২৬০ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১৩৩ রান করে অপরাজিত থাকেন উইলিয়ামসন। ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬০ রান করেন ইয়ং। ১৩৪ বলের ইনিংসে ৮ চার মেরে অপরাজিত থাকেন তিনি। 

ম্যাচসেরা হয়েছেন উইল ও’রুর্কি। টেস্ট ক্যারিয়ারের অভিষেক ম্যাচে ৯৩ রানে নেন ৯ উইকেট। যার মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক নিল ব্র্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ২৪২ রানে অলআউট হয়েছে প্রোটিয়ারা।  ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন রুয়ান দি সোয়ার্ত। এরপর নিউজিল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে ২১১ রানে অলআউট হয়েছে। ৩১ রানের লিড পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *